কলকাতা : ২৪ মে শনিবার – আয়োজক সংস্কৃত ভারতী, (দক্ষিণবঙ্গ) ও বিবেকানন্দ দশ দিবসীয় সংস্কৃত সম্ভাষণ শিবিরের ও কার্যক্রম উপলক্ষে ‘সংস্কৃত সংস্কৃতিক সন্ধ্যা’যোগ অনুসন্ধান সংস্থান (কলকাতা)। সহায়ক-হেরিটেজ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশনস্।
সংস্কৃত হল ভারতীয় সংস্কৃতির মূল। বিশ্বের প্রায় সব ভাষার জননী হল সংস্কৃত ভাষা। সংস্কৃত ভাষার প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে সংস্কৃত ভারতী নিরন্তর কাজ করে চলেছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংস্কৃত ভারতের বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। সংস্কৃত ভারতের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হল নিঃশুল্ক দশ দিবসীয় সংস্কৃত সম্ভাষণ শিবির। মাত্র ১০ দিন ২ ঘন্টা করে সময় দিয়ে সাধারণ মানুষ এই শিবিরে অংশগ্রহণ করে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতে পারেন। সংস্কৃত ভারতী (দক্ষিণবঙ্গ) ও বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থানের (কলকাতা) যৌথ উদ্যোগে গত ১০ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত একটি দশ দিবসীয় সংস্কৃত সম্ভাষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী এই শিবিরে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। শিবিরের সবার হোক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে একটি সংস্কৃত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই বিষয়ে স্থান প্রদান করে এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য করে অনুষ্ঠানটিকে বাস্তবায়িত হতে সাহায্য করে হেরিটেজ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশনস্ । ২৪ শে মে ২০২৫ বিকেল সাড়ে চারটে থেকে হেরিটেজ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশনস্-এর স্বামী বিবেকানন্দ সভাগৃহে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে ছিল বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ, সরস্বতী বন্দনা, সংস্কৃত নাটক, সংস্কৃত সম্ভাষণ প্রদর্শন, লঘু নাটিকা, সুভাষিত ও গীতাশ্লোক ইত্যাদি। সর্বোপরি সংস্কৃত গীতের সঙ্গে সংস্কৃত নৃত্য ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণীয় বিষয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বার সংস্কৃত সংগীত ও সংস্কৃত নৃত্য বাদ্যযন্ত্র সহযোগে একসঙ্গে মঞ্চে সাক্ষাৎ প্রদর্শিত হয়। বৈদিক যুগের সঙ্গীত কেমন ছিল তার একটি ক্ষুদ্র প্রতিরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। সঙ্গীতের গবেষণামূলক এই বিষয়টি যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত তিনি হলেন প্রসিদ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ আচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী। মহাশয়ও দশ দিন নিয়মিত সংস্কৃত সম্ভাষণ শিবিরের অংশগ্রহণ করে সংস্কৃত সঙ্গীতকে নতুন রূপদান করার প্রচেষ্টা করেন। বিভিন্ন সংস্কৃত সংগীতকে নতুন করে সুর প্রদান করে এবং রবীন্দ্র সংগীতকেও নতুন করে সংস্কৃত ভাষায় উপস্থাপন করে অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা প্রদান করেন। ভারতীয় আদি শাস্ত্রীয় সংস্কৃত সংগীতকে নতুন করে তুলে ধরার এটি ছিল একটি অনন্য প্রয়াস। এছাড়াও আচার্য সঞ্জয় মহাশয় নিজে বন্দেমাতরম সংগীতের সঙ্গে চিত্রাবীণা বাজিয়ে দর্শকদের সম্মোহিত করেন। সংস্কৃত নৃত্য কেমন হওয়া উচিত তার নিদর্শন দর্শকদের কাছে উপস্থাপিত করেন শ্রী প্রদ্যুৎ কুমার দত্ত (অধ্যাপক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, নৃত্য বিভাগ) মহাশয়। প্রদ্যুৎ মহাশয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা সংস্কৃত সংগীতের সঙ্গে মঞ্চে সংস্কৃত নৃত্য উপস্থাপিত করেন, যা অনুষ্ঠানটিকে একটি অন্যত্র প্রদান করে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটিকে সংস্কৃত ভাষায় পরিচালনা করেন বিশিষ্ট গায়িকা শ্রীমতি রেশমি চক্রবর্তী। সংস্কৃত ভাষায়ও যে এত সুন্দর অনুষ্ঠান পরিচালনা হতে পারে তার একটি নিদর্শন মহাশয়া তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক প্রসিদ্ধ গায়ক-গায়িকা উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা মাত্র ১০ দিন শিবিরে অংশগ্রহণ করে অনন্য সংস্কৃত সংগীত উপস্থাপিত করেন। ৮ বছর বয়সের শিশু থেকে ৭৮ বছর বয়সের প্রবীণ ব্যক্তিও সংস্কৃত ভাষার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয় উপস্থাপিত করেন। এ ছাড়াও সর্বতোভাবে অনুষ্ঠানটি সফল হতে সাহায্য করেন শ্রী প্রদীপ আগরওয়াল (সি.ই.ও, হেরিটেজ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশনস্) এবং ড. অভিজিৎ ঘোষ (অধ্যক্ষ বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান,কলকাতা)। এই অনুষ্ঠানের সংস্কৃত ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে নিঃশুল্ক দশ দিবসীয় সংস্কৃত শিবিরের আয়োজন করার পরিকল্পনা চলছে। আশা করি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই বিষয়টিকে সাদরে গ্রহণ করবেন। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও রূপদান করছেন এবং ১০ দিনের শিবিরে শিক্ষক রূপে পাঠদান করেছেন আচার্য অনুভব হাজরা ( বিভাগীয় প্রধান, সংস্কৃত বিভাগ, বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান কলকাতা এবং কার্যকর্তা, সংস্কৃত ভারতী দক্ষিণবঙ্গ)।



